রাজনীতি শব্দটিকে যদি দুটি শব্দে বিভাজন করি তাহলে দাঁড়ায় ‘রাজ’ ও ‘নীতি’। রাজার নীতি দিয়ে রাজনীতি নয়, বরং নীতি দিয়ে রাজা রাজনীতি করবেন। আমরা প্রতিনিয়ত দেখে আসতেছি, একজন নেতার পিছনে শতশত কর্মীর মিলনমেলা। কিন্তু এই কর্মীরা কি একটু খবর রাখে তাদের নেতা রাজনীতির অপব্যবহার করছে কিনা? যদি রাখতো তাহলে নীতি দিয়েই রাজনীতি হইতো।
রাজনীতি শব্দটির মূল অর্থ হলো “রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি”। অর্থাৎ, জনগণের কল্যাণে রাষ্ট্রের উন্নয়ন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, এবং মানবিক সমাজ গঠনের এক মহান উদ্দেশ্যই ছিলো রাজনীতির মূল লক্ষ্য। অতীতে রাজনীতি ছিলো দেশ ও জনগণের জন্য আত্মত্যাগের এক মহৎ ক্ষেত্র। নেতারা জনগণের পাশে দাঁড়াতেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেন, দেশের স্বাধীনতা ও মর্যাদার জন্য লড়তেন। তখন রাজনীতি মানে ছিলো নীতির পথ, সেবা ও আত্মত্যাগের প্রতীক।
কিন্তু আজকের বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। রাজনীতি এখন অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষমতা ও প্রভাব বিস্তারের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। জনগণের কল্যাণের পরিবর্তে ব্যক্তিগত স্বার্থ, দলীয় আধিপত্য, আর্থিক লাভ ও প্রতিপক্ষকে দুর্বল করার প্রতিযোগিতাই মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাঠপর্যায়ে আদর্শের রাজনীতি ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে, নতুন প্রজন্মের চোখে রাজনীতি এখন ভয় ও ঘৃণার জায়গা হয়ে উঠছে।
রাজনীতি হওয়ার কথা ছিলো দেশপ্রেম, মানবতা, ত্যাগ ও দায়িত্ববোধের মিশ্রণে এক মহৎ সাধনা। কিন্তু এখন এটি অনেক সময় দুর্নীতি, হিংসা, লোভ ও স্বার্থপরতার অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছে। জনগণ তাদের বিশ্বাস হারাচ্ছে, তরুণরা আগ্রহ হারাচ্ছে, সমাজে বিভাজন বাড়ছে।
তবুও আশার আলো এখনো নিভে যায়নি। যদি নতুন প্রজন্ম সৎ, আদর্শবান ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্বে এগিয়ে আসে; যদি রাজনীতি পুনরায় জনগণের সেবার হাতিয়ার হয়ে ওঠে, তবে আবারও রাজনীতি ফিরে পেতে পারে তার আগের মর্যাদা। রাজনীতি তখন আবার হবে “জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা, জনগণের রাজনীতি”।












