ঢাকা ০৯:৩৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ৩০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
জকিগঞ্জে ২০ বোতল ভারতীয় মদসহ যুবক আটক!বারহাল কোনাগ্রামে অভিযান, নেতৃত্বে এসআই মুর্শেদ ও এএসআই রমজান আলী সংস্কারের অভাবে সরকারের এক্সিট ও নির্বাচন প্রক্রিয়া অনিশ্চিত হয়ে উঠতে পারে: আখতার হোসেন সিলেট বিভাগের টপ ফ্রিল্যান্সার ও উদ্যোক্তা হিসাবে স্টার অ্যাচিভার্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ পেলেন জকিগঞ্জের দুই তরুণ—জসিম ও মারজান ২০২৫-২০২৬ সনের উন্মুক্ত মাঠে সকল বিভাগীয় তাফসির মাহফিল স্থগিত ঘোষণা করলেন ড. মিজানুর রহমান আজহারী ভিসা যাচাইয়ে নতুন কঠোরতা: হৃদরোগ থাকলে বাতিল হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রগমন সাপে কামড় দিলে কৃষকের পাল্টা কামড়! বেঁচে গিয়ে বললেন— “আমি ভাগ্যবান, কিন্তু এটা খুবই বোকামি ছিল” সিলেট-৫ আসনে এনসিপির সম্ভাব্য প্রার্থী মাওলানা হাবিবুর রহমান মাসরুর নিয়ে জোর আলোচনা নিবন্ধন পেল তিন রাজনৈতিক দল সিলেট: জকিগঞ্জে আপন মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ, পাষণ্ড বাবা কারাগারে জকিগঞ্জে দুর্ধর্ষ চুরি: লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট, এলাকায় চরম আতঙ্ক

নানা ফসলে ভরপুর যমুনার বালুচর

  • আপডেট সময় : ১০:০০:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ৬৫ বার পড়া হয়েছে

ছবিঃ সংগৃহীত

বগুড়ার সারিয়াকান্দির যমুনা নদীর বিস্তীর্ণ বালুচর এক সময় অনাবাদি থাকত। চাহিদার কারণে এখন চরগুলো নানা ফসলে ভরপুর। চরের কৃষকরা এখন তাদের উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। অনেকে চর ছেড়ে উপজেলা সদর এমনকি জেলা শহরেরও বসতি গড়েছেন।

স্থানীয় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, চাষাবাদে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবনের ফলে এসব সম্ভব হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়া সারিয়াকান্দির ১২ ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় সবই যমুনা ও বাঙালি নদীর তীরবর্তী। এর মধ্যে তিনটি ইউনিয়নে বাঙালি ও সুখদহ নদী বহমান। পৌরসভাসহ ছয় ইউনিয়নের আংশিক ও তিনটি ইউনিয়ন সম্পূর্ণ যমুনা নদীগর্ভে। ফলে আগে নদী তীরবর্তী বিশালাকার চারণভূমি অনাবাদি থাকত।

তাছাড়া যমুনা, বাঙালি ও সুখদহ নদীর নাব্যতা না থাকায় এর অববাহিকায় পলি পরে বিশালাকার কৃষি জমির সৃষ্টি হয়েছে। এসব কৃষিজমিতে পানির অভাবে কৃষকরা তাদের কাঙ্ক্ষিত ফসলাদি চাষ করতে পারতো না। ফসল ফলানোর জন্য আগে বৃষ্টির পানিই ছিল একমাত্র ভরসা; কিন্তু গত কয়েক বছর ধরেই ডিজেল বা বিদ্যুৎচালিত শ্যালোমেশিন দিয়ে পানি সেচ দিয়ে চাষাবাদ করা হচ্ছে। ফলে উপজেলার উত্তপ্ত বালুচর আর অনাবাদি ফেলে না রেখে সেখানে কৃষকরা নানা ধরনের ফসল ফলাচ্ছেন। আগের চেয়ে উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল বেশি চাষাবাদ করে এখন কৃষকরা ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

কেউ কেউ বছর চুক্তিতে জমি নিয়ে ৫০ বিঘা থেকে শুরু করে ৩০০ বিঘা পর্যন্ত জমি প্রকল্প আকারে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু করেছেন। আর এসব ফসল ঘরে তুলে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। তাদের অনেকে চরের বাড়িঘরের পাশাপাশি সন্তানদের শহরে রেখে পড়াশোনা ও সেখানে পাকা বাড়িঘরও নির্মাণ করেছেন।

এখন বাঙালি ও যমুনা নদীর চরাঞ্চলের যেদিকে দুচোখ যায় সেদিকেই শুধুই ফসল আর ফসল। এগুলোর মধ্যে মরিচ, ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া, নানা জাতের ধান, বিভিন্ন প্রকারের শাকসবজি, কলাই, মিষ্টি আলু ও গোল আলু, গম, তিল অন্যতম। এসব ফসল বিক্রির সাথে জড়িত থেকে উপজেলার শত শত বেকার যুবকের কর্মসংস্থানও হচ্ছে। ঘুরছে অর্থনীতির চাকা।

সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসের সূত্র জানায়, বিভিন্ন ফসলের মধ্যে এ বছর উপজেলায় ৩ হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে সাত হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। ১৩০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে ১৫ থেকে ২০ টনের বেশি মিষ্টি কুমড়া উৎপন্ন হচ্ছে; যা বাজারে ৫০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি হয়। তাছাড়া ২০০ হেক্টর জমিতে গম, ১০৩০ হেক্টর জমিতে মসুর, ৫৩০ হেক্টর জমিতে মাসকলাই, ৭৭০ হেক্টর জমিতে খেসারি, ৯১৪ হেক্টর জমিতে চিনাবাদাম এবং ১৫ হেক্টর জমিতে তিলের আবাদ হয়েছে। এর প্রায় অধিকাংশই চরাঞ্চলে চাষাবাদ হয়েছে।

উপজেলার হাটশেরপুর ইউনিয়নের দীঘাপাড়া চরের কৃষক মোস্তফা মিয়া জানান, গত বছর তিনি ৩৫ বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেন। মাত্র তিন মাসে সাড়ে ১০ লাখ টাকা লাভ পেয়েছিলেন। এ বছর ৪৫ বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করেছেন। তার মতো এ চরেই মান্না মিয়া ৪০ বিঘা, হবিবর মিয়া ৭০ বিঘা এবং আমরুল মিয়া ৬০ বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেছেন।

মোস্তফা মিয়া আরও জানান, চরাঞ্চলে এখন কৃষকরা ২০০ থেকে ৩০০ বিঘা পর্যন্ত জমি প্রকল্প আকারে বাণিজ্যিকভাবে ফসল চাষাবাদ করছেন। আর এগুলো সম্ভব হচ্ছে শ্যালো ইঞ্জিনে ফিতা পাইপের সাহায্যে উঁচুনিচু জমিতে পানি সেচের মাধ্যমে এবং আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ও উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল চাষাবাদের কারণে।

উপজেলার পাইকারি কাঁচামাল ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান, শুধুমাত্র যমুনা চরের ফসলের ওপর নির্ভর করেই যমুনা তীরের প্রায় পাঁচটি এলাকায় ফসল বিক্রির আড়ত গড়ে উঠেছে। প্রতিটি আড়তে প্রতিদিন হাজারের বেশি মণ করে বিভিন্ন ধরনের ফসল আমদানি হচ্ছে।

সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম বলেন, চরাঞ্চল এখন মানুষের জন্য অভিশাপ নয়। এটি এখন কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ। আমাদের পরামর্শে নানা জাতের উচ্চ ফলনশীল ফসল চরের উর্বর মাটিতে প্রচুর পরিমাণে ফলছে। এসব ফসল বিক্রি করে কৃষকরা ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

কেকে

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

জনপ্রিয় সংবাদ

জকিগঞ্জে ২০ বোতল ভারতীয় মদসহ যুবক আটক!বারহাল কোনাগ্রামে অভিযান, নেতৃত্বে এসআই মুর্শেদ ও এএসআই রমজান আলী

নানা ফসলে ভরপুর যমুনার বালুচর

আপডেট সময় : ১০:০০:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪

বগুড়ার সারিয়াকান্দির যমুনা নদীর বিস্তীর্ণ বালুচর এক সময় অনাবাদি থাকত। চাহিদার কারণে এখন চরগুলো নানা ফসলে ভরপুর। চরের কৃষকরা এখন তাদের উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। অনেকে চর ছেড়ে উপজেলা সদর এমনকি জেলা শহরেরও বসতি গড়েছেন।

স্থানীয় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, চাষাবাদে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবনের ফলে এসব সম্ভব হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়া সারিয়াকান্দির ১২ ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় সবই যমুনা ও বাঙালি নদীর তীরবর্তী। এর মধ্যে তিনটি ইউনিয়নে বাঙালি ও সুখদহ নদী বহমান। পৌরসভাসহ ছয় ইউনিয়নের আংশিক ও তিনটি ইউনিয়ন সম্পূর্ণ যমুনা নদীগর্ভে। ফলে আগে নদী তীরবর্তী বিশালাকার চারণভূমি অনাবাদি থাকত।

তাছাড়া যমুনা, বাঙালি ও সুখদহ নদীর নাব্যতা না থাকায় এর অববাহিকায় পলি পরে বিশালাকার কৃষি জমির সৃষ্টি হয়েছে। এসব কৃষিজমিতে পানির অভাবে কৃষকরা তাদের কাঙ্ক্ষিত ফসলাদি চাষ করতে পারতো না। ফসল ফলানোর জন্য আগে বৃষ্টির পানিই ছিল একমাত্র ভরসা; কিন্তু গত কয়েক বছর ধরেই ডিজেল বা বিদ্যুৎচালিত শ্যালোমেশিন দিয়ে পানি সেচ দিয়ে চাষাবাদ করা হচ্ছে। ফলে উপজেলার উত্তপ্ত বালুচর আর অনাবাদি ফেলে না রেখে সেখানে কৃষকরা নানা ধরনের ফসল ফলাচ্ছেন। আগের চেয়ে উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল বেশি চাষাবাদ করে এখন কৃষকরা ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

কেউ কেউ বছর চুক্তিতে জমি নিয়ে ৫০ বিঘা থেকে শুরু করে ৩০০ বিঘা পর্যন্ত জমি প্রকল্প আকারে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু করেছেন। আর এসব ফসল ঘরে তুলে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। তাদের অনেকে চরের বাড়িঘরের পাশাপাশি সন্তানদের শহরে রেখে পড়াশোনা ও সেখানে পাকা বাড়িঘরও নির্মাণ করেছেন।

এখন বাঙালি ও যমুনা নদীর চরাঞ্চলের যেদিকে দুচোখ যায় সেদিকেই শুধুই ফসল আর ফসল। এগুলোর মধ্যে মরিচ, ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া, নানা জাতের ধান, বিভিন্ন প্রকারের শাকসবজি, কলাই, মিষ্টি আলু ও গোল আলু, গম, তিল অন্যতম। এসব ফসল বিক্রির সাথে জড়িত থেকে উপজেলার শত শত বেকার যুবকের কর্মসংস্থানও হচ্ছে। ঘুরছে অর্থনীতির চাকা।

সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসের সূত্র জানায়, বিভিন্ন ফসলের মধ্যে এ বছর উপজেলায় ৩ হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে সাত হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। ১৩০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে ১৫ থেকে ২০ টনের বেশি মিষ্টি কুমড়া উৎপন্ন হচ্ছে; যা বাজারে ৫০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি হয়। তাছাড়া ২০০ হেক্টর জমিতে গম, ১০৩০ হেক্টর জমিতে মসুর, ৫৩০ হেক্টর জমিতে মাসকলাই, ৭৭০ হেক্টর জমিতে খেসারি, ৯১৪ হেক্টর জমিতে চিনাবাদাম এবং ১৫ হেক্টর জমিতে তিলের আবাদ হয়েছে। এর প্রায় অধিকাংশই চরাঞ্চলে চাষাবাদ হয়েছে।

উপজেলার হাটশেরপুর ইউনিয়নের দীঘাপাড়া চরের কৃষক মোস্তফা মিয়া জানান, গত বছর তিনি ৩৫ বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেন। মাত্র তিন মাসে সাড়ে ১০ লাখ টাকা লাভ পেয়েছিলেন। এ বছর ৪৫ বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করেছেন। তার মতো এ চরেই মান্না মিয়া ৪০ বিঘা, হবিবর মিয়া ৭০ বিঘা এবং আমরুল মিয়া ৬০ বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেছেন।

মোস্তফা মিয়া আরও জানান, চরাঞ্চলে এখন কৃষকরা ২০০ থেকে ৩০০ বিঘা পর্যন্ত জমি প্রকল্প আকারে বাণিজ্যিকভাবে ফসল চাষাবাদ করছেন। আর এগুলো সম্ভব হচ্ছে শ্যালো ইঞ্জিনে ফিতা পাইপের সাহায্যে উঁচুনিচু জমিতে পানি সেচের মাধ্যমে এবং আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ও উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল চাষাবাদের কারণে।

উপজেলার পাইকারি কাঁচামাল ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান, শুধুমাত্র যমুনা চরের ফসলের ওপর নির্ভর করেই যমুনা তীরের প্রায় পাঁচটি এলাকায় ফসল বিক্রির আড়ত গড়ে উঠেছে। প্রতিটি আড়তে প্রতিদিন হাজারের বেশি মণ করে বিভিন্ন ধরনের ফসল আমদানি হচ্ছে।

সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম বলেন, চরাঞ্চল এখন মানুষের জন্য অভিশাপ নয়। এটি এখন কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ। আমাদের পরামর্শে নানা জাতের উচ্চ ফলনশীল ফসল চরের উর্বর মাটিতে প্রচুর পরিমাণে ফলছে। এসব ফসল বিক্রি করে কৃষকরা ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

কেকে